০৮ বছর পর টঙ্গীর দত্তপাড়ার চাঞ্চল্যকর হাসান হত্যার রহস্য উদঘাটন; গ্রেফতার-০৩
দীর্ঘ০৮ বছর পর টঙ্গীর দত্তপাড়ার চাঞ্চল্যকর হাসান হত্যার রহস্য উদঘাটন সহ ঘটনার সহিত জড়িত ০৩ আসামিকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই গাজীপুর। গত ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ তারিখ দিবাগত রাত্রিতে টঙ্গীর গাজীপুরা এলাকা থেকে আসামী আজিজুলকে, দত্তপাড়া ইসলাপুর এলাকা থেকে আসামী রোমানকে এবং দত্তপাড়া হাউজবিল্ডিং এলাকা থেকে আসামী জাফরকে গ্রেফতার করা হয়।
ভিকটিম মোঃ হাসান (৪৫), পিতা-মোঃ আউয়াল তালুকদার, সাং-সুটিয়াকাঠি, থানা-স্বরুপকাঠি, জেলা-পিরোজপুর প্রায় ৩/৪ বছর যাবৎ গাজীপুর টঙ্গী থানাধীন হাসান লেন দত্তপাড়া জনৈক হাজী মোঃ মাঈন উদ্দিন মিয়ার ফার্নিচার এর কারখানায় ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতো এবং উল্লেখিত ফার্নিচার কারখানার পূর্ব পাশের রুমে বসবাস করতো। ভিকটিমের আত্মীয় স্বজন গত ২৯/০১/২০১৫ তারিখ রাত্র ০৯.০০ ঘটিকায় ভিকটিমের সাথে যোগাযোগ করে না পেয়ে কারখানার মালিকসহ অন্যান্যরা কারখানার তালা ভেঙ্গে ভিকটিম হাসান(৪৫) এর মৃতদেহ কারখানার ফ্লোরে পেয়ে টঙ্গী থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে টঙ্গী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে বাদীর ভাইয়ের মৃতদেহের নাকের মাথার অংশ নেই, যা দ্বারা রক্ত নির্গত হচ্ছে ও মুখের চোয়ালের নিচে অংশ ক্ষত, মাংস নেই, মুখের দাঁত দেখা যাচ্ছে এবং বাম বুকে স্ক্রু ড্রাইভার দ্বারা বুকের ভেতর ঢুকানো কালো গেঞ্জি দ্বারা মোড়ানো অবস্থায় আছে এবং লিঙ্গ ও অন্ডকোষের বাম পাশের মাংস নেই, যা ক্ষত অবস্থায় সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরন করেন। এ সংক্রান্তে ভিকটিমের ভাই মোঃ বাবু তালুকদার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে টঙ্গী থানার মামলা নং-৪৭ তারিখ- ৩০/০১/২০১৫খ্রিঃ ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড আইনে মামলা দায়ের করলে টঙ্গী থানা পুলিশ গত ৩০/০১/২০১৫ খ্রিঃ তারিখ হতে ২০/০৪/২০১৮খ্রিঃ তারিখ পর্যন্ত মোট ৩ বছর ২ মাস ২০ দিন তদন্ত করার পর তদন্তকালীন সময় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকার নির্দেশক্রমে মামলাটি সিআইডি গাজীপুরে ন্যস্ত হলে সিআইডি গাজীপুর গত ০২/০৫/২০১৮খ্রিঃ হতে ০৫/০৯/২০২০খ্রিঃ পর্যন্ত মোট প্রায় ২ বছর ৪ মাস ৩ তিন মামলাটি তদন্ত শেষে টঙ্গী পূর্ব থানার চূড়ান্ত রিপোর্ট সত্য নং-৪৪, তারিখ-০৫/০৯/২০২০খ্রিঃ ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেন। পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালত স্ব-প্রনোদিত হয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই গাজীপুর জেলাকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করলে পুলিশ পরিদর্শক(নিঃ) মোঃ হাফিজুর রহমান পিপিএম, পিবিআই গাজীপুর জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন।
অতিরিক্ত আইজিপি পিবিআই জনাব বনজ কুমার মজুমদার. বিপিএম (বার), পিপিএম মহোদয়ের সঠিক তত্ত্বাবধানে ও পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, জনাব মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এঁর সার্বিক দিক নির্দেশনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক(নিঃ) মোঃ হাফিজুর রহমান পিপিএম এর নেতৃত্বে পিবিআই গাজীপুর জেলার চৌকস টিম গত ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ তারিখ দিবাগত রাত্রি অনুমান ০৯.৩০ টার সময় টঙ্গীর গাজীপুরা এলাকা থেকে আসামি ১। মোঃ আজিজুল ইসলাম (২৮), পিতা-আলী আকবর, মাতা-মনোয়ারা বেগম, সাং-এরশাদনগর, ব্লক নং-০৫, হোল্ডিং নং-৪৮ (ছোট বাজার মসজিদ গলি), থানা-টঙ্গী পূর্ব, গাজীপুর মহানগর, গাজীপুর কে, রাত্রি অনুমান ২.১০ টার সময় দত্তপাড়া ইসলাপুর এলাকা থেকে আসামি ২। মোঃ হুমায়ন কবির @ রোমান (৪০), পিতা-মৃত আঃ খালেক সরদার, মাতা-মৃত হাসিনা বেগম, সাং-৬/২ ইসলামপুর, দত্তপাড়া, এসকে মান্নান রোড, উভয় থানা-টঙ্গী পূর্ব, গাজীপুর মহানগর, গাজীপুর কে এবং রাত্রি অনুমান ৩.৩০ টার সময় দত্তপাড়া হাউজবিল্ডিং এলাকা থেকে ৩। আসামী মোঃ জাফর ইকবাল (৪৩), পিতা-মোঃ আঃ হালিম চৌধুরী, মাতা-নূরজাহান বেগম, সাং-দত্তপাড়া হাউজ বিল্ডিং, হোল্ডিং-০৪, ফাতেমা খানম রোড, থানা-টঙ্গী পূর্ব, জিএমপি, গাজীপুর কে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা জানায় যে, আসামি আজিজুল, রোমান ও জাফর টংগীর বিভিন্ন স্থানে মাদক বিক্রি ও সেবন করতো। এছাড়াও তাদের সাথে প্রায় ৮/১০ জনের একটি গ্রুপ ছিলো। যারা টংগী এলাকার বিভিন্ন স্থানে মাদকের আড্ডা বসাতো এবং সবাই মিলে মাদক সেবন করতো। অত্র মামলার ঘটনার সময় গ্রেফতারকৃত আসামি আজিজুল, রোমান,জাফরসহ আরো ৬/৭ জন সহযোগী আসামি মিলে টংগীস্থ দত্তপাড়া দীঘিরপাড় ভিকটিমের কাঠের কারখানার ভেতরে মাদক সেবন করার জন্য প্রবেশ করতে চায়। তখন ভিকটিম হাসান তাদেরকে ভেতরে প্রবেশ করতে নিষেধ করে। ইতোপূর্বেও এ সংক্রান্তে ভিকটিম হাসানের সাথে আসামিদের তর্কাতর্কী হয়েছিলো। ঘটনার দিন গত ২৭ জানুয়ারী ২০১৫ খ্রিঃ আসামিরা জোরপূর্বক কারখানার দরজা খুলে দিতে ভিকটিমকে বাধ্য করে। এর পর আসামিগণ উক্ত কাঠের কারখানার ভেতরে প্রবেশ করে ভিকটিম হাসানকে গালিগালাজ করে এবং মাদক সেবন করতে শুরু করে। তখন ভিকটিম হাসান মাদক সেবন করার জন্য আসামিদেরকে নিষেধ করে। এতে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে এলোপাথারীভাবে হাসানকে মারপিট করতে থাকে। আসামিরা কারখানার ভেতরে থাকা স্ক্রু-ড্রাইভার, হাতুড়িসহ ফার্নিচার তৈরীর অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে হাসানের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করলে হাসান অচেতন হয়ে পড়লে আসামিগণ ভিকটিমকে কারখানার ভেতরে ফেলে রেখে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে চলে যায়। গত ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ তারিখ বিধি মোতাবেক গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদানের নিমিত্তে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হলে আসামি আজিজুল ও রোমান মামলার ঘটনায় নিজেদের ও অন্যান্য জড়িতদের ভূমিকা বিস্তারিত বর্ণনা করে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
এ বিষয়ে পিবিআই গাজীপুর জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান, বিপিএম বলেন, আমরা দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর তথ্য-প্রযুক্তি ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আসামী আজিজুল, রোমান এবং আসামী জাফরকে গ্রেফতার করি। বিধি মোতাবেক গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদানের নিমিত্তে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হলে আসামি আজিজুল ও রোমান বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।